প্রকাশিত: Sat, Feb 11, 2023 6:39 AM
আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 8:02 AM

বইমেলা জার্নাল-২০২৩

লেখককে জানুন তার লেখা দিয়েই

মুম রহমান : পরিচিত লোক বই কিনলে আমি বরং বিরক্ত হই। নিজেকে তখন খুচরা লেখক মনে হয়। আমি লেখালেখি করেই খাই। এটাই আমার পেশা। নেশা, শখ, টাইম পাস যারা করে তাদের পরিচিত লোকরা তাদের বই কিনুক। আমি ব্যক্তজীবনেও আত্মীয়স্বজন এড়িয়ে চলি। বন্ধু, প্রেমিকাÑ এগুলো মানুষের অর্জন। মানুষ নিজে যে সম্পর্ক বেছে নেয় আমি সেগুলোকে সম্মান করি। সম্মানিত প্রিয়জনদের আমি বরাবরই বলি, সারা বিশ্বে তো বটেই বাংলা ভাষায়ও বহু গুরুত্বপূর্ণ লেখক আছেন। 

আগে তাদের পড়ুন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শহিদুল জহির, হুমায়ূন আহমেদ পড়ুন। নিশ্চয়ই তারা আমার চেয়ে ভালো লেখক। হ্যাঁ লেখককে চিনুন লেখা দিয়ে। লেখককে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, কেবল এই শর্তে তার বই কেনার প্রয়োজন নেই। এমনকি লেখক কতো বড় আমলা, পুলিশ, নেতা, অভিনেতা, অধ্যাপক, সম্পাদক , ফেসবুকার ইত্যাদি জানারও দরকার নেই। তাকে জানুন তার লেখা দিয়েই। 

আমি নিজে ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্র ধরে কারো বই কিনি না। আপনাকেও কিনতে মানা করছি। অন্তত বই কেনার ব্যাপারে রুচির পরিচয় দিন। আপনার হালাল পয়সা দিয়ে সেই লেখকের বই কিনুন যার লেখা আপনার ভালো লাগে, কিংবা সেই লেখকের বই কিনুন যার লেখার বিষয় বা ধরণ আপনাকে টানে। খামাখা তেল দেয়ার প্রয়োজনে বই কিনে সেলফি তুলবেন না। 

আপনি নিশ্চয়ই ফাউফাউ হাবিজাবি বই বা লেখকের  উদ্দেশে বইমেলায় ঘুরতেই পারেন। আপনার স্বাধীনতা আছে যা খুশি করার। ঘুরতে ঘুরতে দুচারজন চেনামুখের মানুষদের সিজনাল বইও কিনে ফেসবুকে পোস্ট দিতে পারেন। সেলফি, অটোগ্রাফ ইত্যাদি দিয়ে জাতে উঠতে পারেন। কিন্তু আমার এ সব ভাল্লাগে না, সেটুকু জানানোর স্বাধীনতা আমার আছে। আপনার মতো ধান্দাবাজ পাঠক আমার দরকার নেই। 

কে আমার বই কিনলো তা নিয়ে প্রকাশ ভাবতে পারেন, ওটি তার ব্যবসা। সেই ভাবনা মতো সে তার কাজ করবে। কিন্তু আমি ভাবি, কে আমার বই পড়লো? যে পড়ে সে পাঠক, যে কেনে সে ক্রেতা, যে বিশেষ উদ্দেশ্যে (বিশেষ করে নির্দিষ্ট লেখককে খুশ করতে) বই কেনে সে ধান্দাবাজ। আমি পাঠক চাই, ধান্দাবাজ চাই না। পাঠক একে অপরের বই শেয়ার করে। এমনকি টাকা না-থাকলেও সে বইটা ধার করে। সেই পাঠকই ভালো যে কেবল লেখার জন্য বইকে গুরুত্ব দেয়। লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক